হুমায়ুন আহমেদ সৃজন: মাল্টা, বাংলাদেশে এটি বেশ জনপ্রিয় ফল, তবে স্থানীয়ভাবে এর উৎপাদন খুবই কম; বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এর বাইরে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এখন ছোট পরিসরে কিছুটা চাষ হচ্ছে। তাই বলে সমতলে মাল্টা চাষ, শুনতে অবাক হলেও এটাকে বাস্তবে রূপান্তর করেছেন ময়মনসিংহের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। জেলার ভালুকা উপজেলার কাদিগড় জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ১১ একর জমিতে পাহাড়ী ফল মাল্টার এই বিশাল বাগানের নাম দিয়েছেন তিনি ‘প্রয়াস এগ্রো’ যা এখন জেলার সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগান।

ব্র্যাক আইটি সার্ভিসের লিড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাজহারুল ইসলাম শামীম ঢাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আনসার ভিডিপি ব্যাংকের সাবেক জিএম মোঃ জালাল উদ্দিন, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির ব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন লোকমান ও আইটি প্রকৌশলী শরীফ, কাজল, বাদল এবং স্থানীয় সমাজসেবক মজিবর রহমানকে সাথে নিয়ে মাল্টার এই বিশাল বাগান করেছেন তিনি।সরেজমিনে জেলার এই সর্ববৃহৎ মাল্টা বাগানে গেলে দেখা যায় সারি সারি মাল্টা গাছে এবার অন্যান্য বছরের চাইতে ব্যাপক ফলন হয়েছে।

২০১৭ সালের জুন মাসের দিকে প্রয়াস এগ্রো নাম দিয়ে ৭ একর জমিতে বারি -১ জাতের উচ্চ ফলনশীল মাল্টা চাষ শুরু করলেও বর্তমানে তা ১১ একর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। শুরুটা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ এবং কৃষি অফিসের ৩০০ চারা দিয়ে শুরু হলেও এখন বাগানে মোট ২২০০ মাল্টা গাছ রয়েছে যার মধ্যে ফলন আসছে ১৭০০ টি গাছ থেকে। বাগানটি থেকে এবছর লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ টন মাল্টা যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা, পাশাপাশি চারা বিক্রির লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লক্ষ টাকারও বেশি।
বাগানটি শুরুর মাত্র ২ বছরের মাথায় ২০১৯ সালে প্রথম ২.৫০ লক্ষ টাকার মাল্টা ও ২.৫০ লক্ষ টাকার চারা বিক্রি হয়। এছাড়াও ২০১৮/১৯ সালে মাল্টাবাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষকৃত লাউশাক, বেগুন, পেপে, ক্যাপসিকাম ও শিমলা মরিচ বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকারও বেশি।
মজার বিষয় হলো মাল্টাতেই থেমে থাকেনি প্রয়াস এগ্রো, মাল্টার পাশাপাশি প্রায় ৪ একর জায়গাজুড়ে ৫০০০ এর বেশি সিডলেস লেবুরও বিশাল বাগান গড়ে তোলা হয়েছে যা থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১০ লক্ষ টাকারও বেশি লেবু ও চারা বিক্রি হয়েছে।
মাল্টা ও লেবুর এই বাগানটিতে ১৫-২০ জনের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যা খুবই ইতিবাচক এবং এই বাগানের সাফল্য দেখে এলাকার শিক্ষিত এবং বেকার যুবকদের মধ্যে মাল্টা ও লেবু বাগান করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবার একটা প্রেরণা তৈরি হয়েছে।

মাজহারুল ইসলাম শামীমের এই কাজে তার বাবা স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সামছুল হক সুরুজ ও অনেক খুশি, বিষয়টিকে তিনি ইতিবাচক ও অনুকরণীয় হিসেবেই দেখছেন।
মাল্টা বাগানের প্রধান উদ্যোক্তা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাজহারুল ইসলাম শামীম প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে উপজেলার অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে বা উপজেলার বাইরে কোথাও জমি পেলে সেখানেও এই বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে তার। এসময় তিনি তার অন্য সহযোগী যারা রয়েছেন তাদের সবার মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ্য করে তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এসময় তিনি পুরো নিউজ টিমকে ভবিষতেও মাল্টা বাগানে মাল্টা খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতেও ভুলেননি।
আর এন/এইচ- #1
সম্পর্কিত সংবাদ
ভালুকায় হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা
বাংলাদেশের দালাল – তারেক চৌধুরী
গ্রামীণ সালিশ’র ইতিবৃত্ত – পর্ব-১: মুখবন্ধ